মা দিবস ও ইসলামের আলোকে মায়ের মর্যাদা: একটি সময়োপযোগী দৃষ্টিভঙ্গি
মা—এই শব্দটি শুধু চারটি বর্ণের সমষ্টি নয়, এটি একটি আবেগ, ভালবাসা, ত্যাগ, দায়িত্ব ও জীবনের অপরিহার্য ভিত্তি। পবিত্র কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী, মায়ের মর্যাদা এতটাই উচ্চ যে তার পায়ের নিচে জান্নাতের অবস্থান। তাই শুধু বছরে একটি দিন নয়, বরং প্রতিদিনই মায়ের প্রতি ভালোবাসা, সেবা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত।
ইসলামে মায়ের মর্যাদা
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন, তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। যদি তারা বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের প্রতি ‘উফ’ শব্দটিও বলবে না।” (সূরা বনি ইসরাইল: ২৩)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন: “আমি মানুষকে পিতা-মাতার প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টে কষ্টে তাকে গর্ভে ধারণ করে এবং কষ্টে প্রসব করে।” (সূরা আহক্বাফ: ১৫)
রাসূল (সা.) এর হাদীসে মায়ের স্থান
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি সর্বাগ্রে কাকে সদ্ব্যবহার করব?” তিনি বললেন, “তোমার মাকে।” সাহাবি বললেন, “তারপর কে?” তিনি বললেন, “তোমার মাকে।” আবার জিজ্ঞেস করলে বললেন, “তোমার মাকে।” এরপর বললেন, “তোমার বাবাকে।” (সহীহ বোখারী)
আরও একবার, এক ব্যক্তি জিহাদে অংশ নিতে চাইলেন। রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার মা কি জীবিত আছেন?” সে বলল, “হ্যাঁ।” তখন তিনি বললেন, “তাহলে তার সেবা করো, কারণ জান্নাত তার পায়ের নিচে।” (সহীহ বোখারী)
মা দিবসের ইতিহাস ও প্রচলন
আধুনিক মা দিবসের সূচনা ১৯০৫ সালে আমেরিকায় আনা জারভিস নামের এক নারীর মাধ্যমে হয়। ১৯১৪ সালে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে “Mother’s Day” হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে পৃথিবীর বহু দেশে, যেমন বাংলাদেশ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, জার্মানি ও রাশিয়ায় দিনটি পালিত হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে নির্দিষ্ট দিনে মা দিবস পালন কতটা যৌক্তিক?
ইসলামে এমন কোনো নির্দিষ্ট দিনের প্রথা নেই যেখানে মা’কে শ্রদ্ধা জানানো হবে আর বাকি দিনগুলোতে উপেক্ষা করা হবে। বরং প্রতিদিনই মায়ের হক আদায় করা, সেবা ও দোয়া করা ইসলামী শিক্ষা। মা দিবস পালন আবেগঘন হলেও এটি যেন রেওয়াজে পরিণত না হয়, বরং প্রতিদিনই হোক মায়ের খেদমতের উপলক্ষ।
মাকে খুশি করার উপায়
- প্রতিদিন খোঁজ নেওয়া ও তার প্রয়োজন মেটানো
- মায়ের পছন্দের কাজ করা ও তাঁর সম্মান রক্ষা
- তার অসুস্থতায় সেবা করা
- বৃদ্ধ বয়সে তাকে অবহেলা না করা
- মায়ের জন্য দোয়া করা: “রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি ছগীরা”
মা-বাবা ইন্তেকাল করলে সন্তানের করণীয়
যাদের মা-বাবা বেঁচে নেই, তাদের উচিত নিয়মিত দোয়া করা, দান-সদকা করা, নফল নামাজ আদায় ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে রূহের মাগফিরাত কামনা করা। আল্লাহ বলেন, “তাদের জন্য দোয়া করো, হে আমার পালনকর্তা! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন করে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।” (সূরা বনি ইসরাইল: ২৪)
শেষ কথা
মা হলেন আমাদের জীবনের ছায়া, শান্তির ছোঁয়া ও আস্থা। একটি দিনে নয়, প্রতিটি মুহূর্তেই তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও খেদমতই হচ্ছে প্রকৃত “মা দিবস” পালন। আসুন, আমরা ইসলামিক শিক্ষার আলোকে প্রতিদিন মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করি এবং জান্নাতের পথ সুগম করি।