বাংলাদেশে স্টারলিংকের পথচলা শুরু: স্যাটেলাইট ইন্টারনেটে নতুন দিগন্ত উন্মোচন

বাংলাদেশে স্টারলিংকের পথচলা শুরু: স্যাটেলাইট ইন্টারনেটে নতুন দিগন্ত উন্মোচন

ভূমিকা: বহুল প্রতীক্ষিত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক অবশেষে বাংলাদেশে তাদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স পরিচালিত এই যুগান্তকারী সেবা চালুর ঘোষণা আজ প্রতিষ্ঠানটির অফিশিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে, দেশের ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা হলো, বিশেষত প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে।

চিত্রঃ স্টারলিংক লোগো

সরকারি অনুমোদন ও ঘোষণা: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী, জনাব ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন যে, গতকাল বিকেলে টেলিফোন আলাপে তাকে বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এই ঘোষণা দেশের প্রযুক্তি খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্যাকেজ ও সেবার বিবরণ: প্রাথমিকভাবে, স্টারলিংক বাংলাদেশে দুটি স্বতন্ত্র প্যাকেজের মাধ্যমে তাদের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবে: ১. স্টারলিংক রেসিডেন্স: এই প্যাকেজের মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬,০০০ টাকা। ২. স্টারলিংক রেসিডেন্স লাইট: তুলনামূলক সাশ্রয়ী এই প্যাকেজটির মাসিক খরচ পড়বে ৪,২০০ টাকা।

উভয় প্যাকেজের ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের সংযোগ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার (যন্ত্রপাতি) বাবদ এককালীন ৪৭,০০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। স্টারলিংকের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো এর গতি এবং ডেটা ব্যবহারের স্বাধীনতা। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই প্যাকেজগুলোতে ব্যবহারকারীরা ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতিতে নিরবচ্ছিন্ন ও আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন, যেখানে কোনো প্রকার স্পিড থ্রটলিং বা ডেটা ক্যাপের সীমাবদ্ধতা থাকবে না।

আবেদন প্রক্রিয়া: আজ থেকেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আগ্রহী গ্রাহকগণ স্টারলিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অথবা তাদের নির্ধারিত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

গুরুত্ব ও সম্ভাবনা: যদিও স্টারলিংকের সেবা তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল, এটি দেশে একটি নির্ভরযোগ্য ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগের বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, যেসব ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন বা অবকাঠামোগতভাবে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলে এখনও ফাইবার অপটিক কেবল কিংবা দ্রুতগতির তারযুক্ত ইন্টারনেট সেবা পৌঁছায়নি, সেসব এলাকার জনসাধারণ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ এখন স্টারলিংকের মাধ্যমে বিশ্বমানের ইন্টারনেট সেবার আওতায় আসতে পারবে। এটি দেশের ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে এবং সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উপসংহার: স্টারলিংকের আগমন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এক নবযুগের সূচনা করলো। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন যেমন আধুনিক বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হতে পারবেন, তেমনই দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট প্রাপ্তিও সহজতর হবে, যা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

1 Comments

  1. বাংলাদেশে স্টারলিংকের পথচলা শুরু: স্যাটেলাইট ইন্টারনেটে নতুন দিগন্ত উন্মোচন

    ReplyDelete
Previous Post Next Post